হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (পর্ব-১)

আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ৬টি জাতির মধ্যে ৫ম জাতি হ'ল 'আহলে মাদইয়ান' । 'মাদইয়ান' হল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরীয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধী পূর্ব জর্ডানের সামুদ্রিক বন্দর 'মোআন' এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। কুফরি করা ছাড়াও এই জনপদের লোকজন ব্যবসায়ের ওযন ও মাপে কম দিত, রাহাজানি ও লুটপাট করত। অন্যায় পথে জনগনের মালসম্পদ ভক্ষণ করত। ইয়াকুত হামাভী (রহঃ) বলেন, ইবরাহীম-পুত্র মাদইয়ানের নামে জনপদটি পরিচিত হয়েছে । হযরত শোয়াইব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিল। ইনি হযরত মুসা (আঃ) এর শ্বশুর ছিলেন। কওমে লূত এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে কওমে মাদইয়ানের প্রতি তিনি প্রেরিত হন । চমৎকার বাগ্মিতার কারণে তিনি 'খাতিবুল আম্বিয়া' নবিগনের মধ্যে সেরা বাগ্মী) নামে খ্যাত ছিলেন।
আহলে মাদইয়ান কে পবিত্র কোরাআনে কোথাও কোথাও 'আছহাবুল আইকাহ্‌' বলা হয়েছে। যার অর্থ 'জঙ্গলের বাসিন্দাগণ'। এটা বলার কারণ এই যে, এই অবাধ্য জনগোষ্ঠী প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে আল্লাহ তাদেরকে সেখানেই ধ্বংস করে দেন। এটাও বলা হয় যে, উক্ত জঙ্গলে আইকা নামক একটা গাছকে তারা পূজা করত।যার আশপাশে জঙ্গলে বেষ্টিত ছিল।

মাদইয়ান ছিলেন হাজেরা ও সারাহর মৃত্যুর পরে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর আরব বংশোদভূত কেনানী স্ত্রী ক্বানতুবা বিনতে ইয়াক্‌ত্বিন এর ৬টি পূত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পূত্র।

উল্লেখ্য যে, হযরত শো'আয়েব (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ১০ টি সূরায় ৫৩ টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে ।

 হযরত শোয়াইব (আঃ) এর দাওয়াতঃ
ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত কওমগুলোর বড় বড় কিছু অন্যায় কাজ ছিল। যার জন্য বিশেষভাবে সেখানে নবি প্রেরিত হয়েছিল । এই নবির কওম এরও কিছু মারাত্বক অন্যায় কাজ ছিল, যেজন্য খাছ করে তাদের মধ্যে  থেকে তাদের নিকটে শো'আয়েব (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়। তিনি তাঁর কওম কে যে দাওয়াত দিয়েছিলেন কোরআনের মধ্যেই সেগুলোর উল্লেখ রয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেন,
"আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই  শো'আয়েব কে প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোন উপাস্য নাই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সুস্পষ্ট প্রমান এসে গেছে। অতএব তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ কর। মানুষকে তাদের মালামাল কম দিয়ো না। ভূপৃষ্ঠে সংস্কার সাধনের পর তোমরা সেখানে অনর্থ সৃষ্টি করো না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যানকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।" "তোমরা পথে ঘাটে এ কারনে বসে থেকো না যে, ইমানদারদের হুমকি দিবে, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি  করবে ও তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্বরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে আধিক্য দান করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরুপ অসুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের। " "আর যদি তোমাদের একদল ঐ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং আরেক দল বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। কেননা তিনিই শ্রেষ্ঠ ফায়ছালাকারী" ।

Comments

Popular posts from this blog

হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (পর্ব-২)

হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (শেষ পর্ব)