হযরত আইউব আলাইহিস সালাম-পার্ট ১
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম হযরত ইয়াকুব আলাইহিস
সালাম এর জ্যেষ্ঠ ভাই ইস বা আইস-এর বংশধর ছিলেন। ইসে্র পিতা ছিলেন হযরত ইসহাক আলাইহিস
সালাম এবং তিনি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর পুত্র ছিলেন। হযরত ইউসুফ আলাইহিস
সালাম এর পুত্র ফ্রাহিমের এক কন্যার নাম ছিল রাহীমা । রহিমার সাথে হযরত আইউব আলাইহিস
সালাম এর বিবাহ হয়েছিল।
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম একদিকে যেমন আল্লাহর
নবি ও রাসূল ছিলেন, অন্যদিকে তিনি একটি বিশাল রাজ্যের বাদশাহও ছিলেন। তাঁর ধন-সম্পদ
ও বিষয় বৈভব ছিল ধারণাতীত।নবী সুলভ আখলাকের জন্যই তিনি সবসময় আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল
থাকতেন। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় তিনি মহান আল্লাহ পাকের ইবাদাত করে সময় কাটাতেন।
হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম নবীর ধর্মীয় আদেশ ও বিধি-বিধান তিনি প্রচার করতেন।
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম ছবরকারী নবীগনের মধ্যে
শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন।
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর নামে বিভিন্ন তাফসীর
বিশারদগন যে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে গেছেন সেগুলোয় ভিত্তি খুবই দুর্বল। আমি কিছু সে
ধরণের ঘটনা এই লেখায় নিয়ে আসব। কিন্তু এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়।
পাপীষ্ঠ ইবলিস তাঁর একনিষ্ঠ ইবাদাতে এবং ধর্মভীরুতায়
ঈর্ষান্বিত হয়ে একদিন আল্লাহর নিকট বলল, হে খোদা! তুমি তো হযরত আইউব আলাহিস সালাম
এর প্রতি খুবই খুশি; কিন্তু ব্যাপারটা কি জানো? সে যে তোমার এত আনুগত্য প্রকাশ এবং
ইবাদাত-বন্দেগী করে, পরোপকার প্রদর্শন করে, তাঁর একমাত্র কারন হল, তাঁর প্রতি
তোমার মুক্তহস্ত দান। আসলে তার ঈমান তেমন মজবুত নয়। তুমি আমার কথা মত এসব ব্যাপারে
একটু কমিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখ, অমনি তাঁর প্রতারনা তোমার নিকট ধরা পড়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিশ! তুই ভুল ধারণা করেছিস।
আমার বান্দা আইউব সুখ-শান্তি ও প্রাচুর্যের মাঝে থেকে আমার যেরুপ ইবাদাত করছে, আমি
যদি তাঁর কাছ থেকে সবকিছু কেড়েও নেই, তবুও একিরুপ ইবাদাত বন্দেগি করবে। তুই আইউবকে
চিনতে পারিসনি।
ইবলিশ বলল, তা কিছুতেই নয়।তুমি যদি হযরত আইউব
আলাইহিসালামের উপর আমার ক্ষমতা দাও, তবে আমি অচিরেই তাঁর ঈমান কেড়ে নিয়ে তাকে
বেঈমান করে দিতে পারব। আমি তোমার নিকট এ প্রতিজ্ঞ্যা করছি।
এরপর ইবলিশ হযরত আইউব আলাইহিসালামের নিকট এসে
তাকে কিছু কুপরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করেও কোন লাভ হল না।
এরপর একদিন আল্লাহ তাআলা নিজেই হযরত আইউব
আলাইহিস সালাম কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আইউব! তোমাকে আমি যে সুখশান্তি ও ধনসম্পত্তি
দান করেছি, তুমি কি তাই পছন্দ কর, না কি দুঃখ-মছিবত পছন্দ কর?
হযরত আইউব আলাইহিসসালাম জবাব দিলেন, “হে
মাবুদ!আপনি আমাকে যে সুখশান্তি ও ধনসম্পত্তি দান করেছেন, তারজন্য আমি আপনার সাধ্যমত
শোকর করে থাকি। কিন্তু আমি একথা জানি যে, অভাবে ধৈর্যাবলম্বন করার মূল্য অনেক বেশি।আজ
পর্যন্ত আমি একদিনও অভাবের দেখা পাইনি তাই কোন ধৈর্যাবলম্বন করার সুযোগও আসেনি।
এজন্য আপনার কাছে আমার আরজ এই যে, আপনি আমাকে দুঃখ, কষ্ট ও বিপদাপদ দিয়ে আমাকে ধৈর্যাবলম্বন
করার সুযোগ দান করুন।”
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর দোয়ার জন্যই হোক বা
ইনলিশ কে দেয়া ক্ষমতার প্রভাবেই হোক, কিছুদিনের মধ্যেই হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর
উপর কঠিন বিপদ আসতে লাগল।
একদিন হঠাৎ চারণ ক্ষেতের একদিক হতে অগ্নিশিখা
বিদ্যুৎ বেগে ছুটে এসে হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর সমস্ত পশুরপাল জ্বালিয়ে ধ্বংস
করে গেল। তখন দলে দলে লোকজন তাঁকে খবর জানাল, হে আল্লাহর নবী! আপনার পশুপালসমূহ্ আগুনে
জ্বলে ভস্বীভূত হয়ে গেছে। একথা শুনে হযরত আইউব আলাইহিস সালাম
বললেন, এখন আমার আর কি করার আছে বল! যার মাল
তিনি স্বেচ্ছায় নিয়ে গেছেন। এতে আমি খুশিই আছি।
এর কয়েকদিন পর একদল লোক অতিশয় ব্যস্তত্রস্ত হয়ে
দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল, হুজুর! আমরা এক ভয়াবহ ঘটনা নিজের চোখে দেখে আসলাম, আপনার আরো
বড় যেই পশুর পাল ছিল অইগুলোও আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এভাবে একের পর এক তার সবকিছুই চলে যেতে থাকল।
এমনকী তার চারটি পুত্র ও তিনটি কণ্যা সন্তানও ভবন ধ্বসে তার নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ
করে।
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম সমস্ত মুছিবতেই ধৈর্যধারণ
করেছেন।এভাবে হযরত
আইউব আলাইহিস সালাম এর উপর বিপদ আপদ আসতে লাগল আর তিনি মহান আল্লাহর প্রতি তখনও ধৈর্যশীল
থেকেছেন।
এরপর একদিন তাঁর পায়ের নিচে ফোস্কার মত দেখা
গেল। দু’একদিনের মধ্যে তা ফেটে একটি ঘা এর সৃষ্টি হল। এই ঘা তাঁর পুরো শরীরে হয়ে
গেল। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর সার শরীরের চামড়া ও মাংসে পচন ধরে গেল।দুর্গন্ধ বের
হতে থাকল তাঁর শরীর হতে। এ অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রীগনের মধ্যে একমাত্র রহিমা ছাড়া
আর সবাই চলে গেল।
বিবি রহিমা ছিলেন অনেক ধার্মিক এবং পতিভক্ত।
তিনি আইউব আলাইহিস সালামের নিকট থেকে তাঁর সেবা করতে থাকলেন।
Comments
Post a Comment