হযরত সুলায়মান (আঃ) পর্ব-১
আল্লাহ তাআলা হযরত সুলায়মান (আঃ) কে বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। ছাগল পালের মালিক ও শস্যপালের মালিক এর মধ্যে পিতা হযরত দাউদ (আঃ) যেভাবে মীমাংসা করেছিলেন, বালক হযরত সুলায়মান (আঃ) তাঁর চাইতে উত্তম মীমাংসা পেশ করেছিলেন। ফলে দাউদ (আঃ) নিজের পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্রের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহন করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী রায় প্রদান করেন।
উক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
" আর স্বরণ কর দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল, যাতে রাত্রিকালে কারো মেষপাল ঢুকে পড়েছিল। আর তাদের বিচারকার্য আমাদের সম্মুখেই হচ্ছিল। অতঃপর আমরা সুলায়মানকে মোকদ্দামাটির ফয়ছালা বুঝিয়ে দিলাম এবং আমরা উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম।"(আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)।
ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ভূষিত হযরত সুলায়মান (আঃ) কে পরবর্তীতে যথার্থভাবেই পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, "সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।"
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, " আমরা দাউদের জন্য সুলায়মানকে দান করেছিলাম। কতই না সুন্দর বান্দা সে এবং সে ছিল (আমার প্রতি) সদা প্রত্যাবর্তনশীল"।(ছোয়াদ ৩৮/৩০)
আরেকটি ঘটনা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যা নিম্নরুপঃ
হযরত সোলায়মান (আঃ) এর সময় নদীর তীরে বসবাসকারিণী দুটি মহিলা একদিন একই সময় স্ব স্ব দুটি দুগ্ধপোষ্য শিশু কোলে করে নদীতে গোসল করতে গেল এবং তারা নিজ নিজ শিশুকে নদীর তীরে বসিয়ে নদীতে গোসল করতে নামল। ইতিমধ্যে নিকটবর্তী জঙ্গল হতে বাঘ এসে দুটি শিশুর একটিকে নিয়ে গেল।
মহিলাদ্বয় গোসল করে তীরে উঠে জীবীত শিশুটিকে নিয়ে ভীষণ ঝগড়া বাঁধিয়ে দিল। কিন্তু কে কার কথা শুনে? শিশুটি যে প্রকৃতই কোন মহিলার তা প্রমাণ করার মত কোন প্রমান কারো কাছেই ছিল না। সুতরাং তাদের ঝগড়া চলতেই থাকল। অবশেষে তারা নিজেদের এ বিবাদ মিটাবার উদ্দেশ্যে হযরত সোলায়মান (আঃ) এর দরবারে গিয়ে বিচারপ্রার্থি হল।
হযরত সোলায়মান (আঃ) উভয় মহিলার বর্ণনা শুনে এবং উভয়েরই শিশুটির প্রতি দাবীর জোর সমান দেখে একমূহুর্ত কি যেন চিন্তা করলেন। তারপর জল্লাদকে ডেকে বললেন, হে জল্লাদ! তুমি তোমার তরবারি ভালভাবে ধার দাও।
মহিলাদ্বয় এ দৃশ্য দেখে বিস্মিত হল এবং বাদশাহের নিকট জিজ্ঞাসা করল, জাহাঁপনা ! আপনি জল্লাদকে তরবারি শানাতে বললেন কেন? এর কারন তো আমরা কিছুই বুঝলাম না।
হযরত সোলায়মান (আঃ) বললেন, কারণ বুঝলেনা? তোমরা যখন দুজনই শিশুটিকে নিজের বলে দাবী করছ, অথচ কেউই কোন প্রমাণ দেখাতে পারছ না, এমতাবস্থায় একজনকে শিশুটিকে দিয়ে দিলে অন্যের প্রতি অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং আমি ন্যায়ের খাতিরে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, শিশুটিকে কেটে সমান দু ভাগ করে দুজনকেই দিয়ে দিব।
বাদশাহ্র এরুপ উক্তি শুনে উভয় মহিলাই কেদে উঠল। তবে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল, হায় কপাল ! কি করব রাক্ষুসি মহিলার পাল্লায় পড়ে আজ আমার নিজের শিশুকে কেটে তাঁর সাথে সমানভাগে ভাগ করে নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে ? অন্তত এ মন্দের ভাল হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছি।কেননা নিজের শিশুর দাবী ছেড়ে দিয়ে তাকে তো আর অন্যের শিশু বলে স্বীকার করে নেয়া যায় না। নিজের স্বত্ব হতে একেবারে বঞ্চিত হওয়া অপেক্ষা যা পাওয়া যায় তাই না পাওয়ার চেয়ে অনেক বেশী।
পক্ষান্তরে, অন্য মহিলাটি শিশুটিকে কাঁটার কথা শুনেই একেবারে ব্যাকুল হয়ে চীৎকার করে বলল, জাহাঁপনা! আল্লাহর কসম, শিশুটিকে কাটবেন না। আমার কলিজার টুকরাটি বেঁচে থাকুক। তাকে ঐ মহিলার কাছে দিয়ে দিন, আমার জন্য তাও ভাল। তবুও মনকে স্বান্তনা দিতে পারব যে, আমার কলিজার টুকরা বেঁচে আছে। আপনি তাকে আমার চোখের সামনে কেটে দ্বি-খন্ডিত করবেন তা আমি দেখতে চাই না।
মহিলাদ্বয়ের কথা শুনে ও তাদের মনের অবস্থা উপলব্ধি করে বাদশাহ হযরত সোলায়মান (আঃ) পরিষ্কারভাবে বুঝলেন যে শিশুটি প্রকৃতপক্ষে কার? তখন তিনি প্রথমোক্ত মহিলার মস্তকোপরি তরবারি উত্তোলন করে বললেন, এখনো সত্য করে বল শিশুটি তোমার কিনা। সত্য বললে প্রাণ রক্ষা পাবে; আর মিথ্যা বললে এ মুহুর্তে তোমাকে আমি হত্যা করব। এবার তাঁর মুখ হতে সত্য কথাটি বের হল।, জাহাঁপনা! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমি এতক্ষন অন্যায় দাবী করেছিলাম, প্রক্ক্রতপক্ষে শিশুটি ঐ মহিলার, আমার নয়।
হযরত সোলায়মান (আঃ) তখন শিশুটিকে তাঁর প্রকৃত মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, তুমি তোমার সন্তান নিয়ে যাও। আর প্রথমোক্ত মহিলাটিকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিলেন, যাও আজ তোমার এ গুরুতর অপরাধ ক্ষমা করলাম। কিন্তু সাবধান, ভবিষৎএ কোন ব্যাপারেই যেন এরুপ না হয়।
Comments
Post a Comment