Posts

মুসলিম জাহানের খলিফা হযরত উমর (রাঃ) এর ঈদ শপিং!

  মুসলিম জাহানের খলিফা হযরত উমর (রাঃ) এর ঈদ শপিং! ঈদের আগের দিন খলিফা উমরের (রা) স্ত্রী নিজ স্বামীকে বললেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না হলেও চলবে, কিন্তু ছোট বাচ্চাটি ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে’। আরব জাহানের শাসক খলিফা উমর (রা) বললেন, ‘আমার তো নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই’। পরে খলিফা উমর (রা) তার অর্থমন্ত্রী আবু উবাইদা (রা) কে এক মাসের অগ্রিম বেতন দেয়ার জন্য চিঠি পাঠালেন। সমগ্র মুসলিম জাহানের খলিফা যিনি, যিনি সেই সময় প্রায় অর্ধেক পৃথিবী শাসন করছেন, তাঁর এ ধরণের চিঠি পেয়ে আবু উবাইদার (রা) চোখে পানি এসে গেল। উম্মতে আমীন আবু উবাইদা (রা) বাহককে টাকা না দিয়ে চিঠির উত্তরে লিখলেন, ‘আমীরুল মুমিনীন! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে ফয়সালা দিতে হবে। প্রথমত, আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না? দ্বিতীয়ত, বেঁচে থাকলেও দেশের জনসাধারণ আপনাকে সেই মেয়াদ পর্যন্ত খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা?’ চিঠি পাঠ করে খলিফা উমর (রা) কোন প্রতি উত্তর তো করলেনই না, বরং এত কেঁদেছেন যে তাঁর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গেলো। আর হাত তুলে আবু উবাইদার (রা) জন্য দোয়া করলেন- একজন যোগ্য অর...

হযরত সুলায়মান (আঃ) পর্ব-১

আল্লাহ তাআলা হযরত সুলায়মান (আঃ) কে বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। ছাগল পালের মালিক ও শস্যপালের মালিক এর মধ্যে পিতা হযরত দাউদ (আঃ) যেভাবে মীমাংসা করেছিলেন, বালক হযরত সুলায়মান (আঃ) তাঁর চাইতে উত্তম মীমাংসা পেশ করেছিলেন। ফলে দাউদ (আঃ) নিজের পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্রের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহন করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী রায় প্রদান করেন। উক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, " আর স্বরণ কর দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল, যাতে রাত্রিকালে কারো মেষপাল ঢুকে পড়েছিল। আর তাদের বিচারকার্য আমাদের সম্মুখেই হচ্ছিল। অতঃপর আমরা সুলায়মানকে মোকদ্দামাটির ফয়ছালা বুঝিয়ে দিলাম এবং আমরা উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম।"(আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)। ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ভূষিত হযরত সুলায়মান (আঃ) কে পরবর্তীতে যথার্থভাবেই পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, "সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।" অন্যত্র আল্লাহ বলেন, " আমরা দাউদের জন্য সুলায়মানকে দান করেছিলাম। কতই না সুন্দর বান্দা সে এবং সে ছিল (আমার প্রতি) সদা...

ধারাবাহিক ইসলামিক উপন্যাস (পর্ব-১)

                         জেরুজালেম থেকে ৫ মাইল দূরে এক সরাইখানা। চারপাশে তার উচু দেয়াল। বাইরে থেকে মনে হয় কিল্লার পাঁচিল। এক বিষন্ন দুপুরে দ্বিতীয়বারের মত এখানে আসল আসেম। সাথে শক্ত-সামর্থ চাকর ওবায়েদ। ওরা দামেশকে যাবার পথে একরাত এখানে অবস্থান করেছিল।             আসেম সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণ। এ ধরনের তরুণদের কাছ থেকে মানুষ পাণউচ্ছল মন মাতানো হাসির ঝংকার শুনতেই বেশি পছন্দ করে। সে তুলনায় তাকে একটু বেশি গম্ভীর মনে হচ্ছে। যদিও সে সুদর্শন নিটোল স্বাস্থ্যের অধিকারী তবু তার উপর দিয়ে যে অনেক ঝড় বয়ে গেছে দেখলেই বুঝা যায়। পোশাক আশাকে সে এক সম্ভ্রান্ত আরবেরই মত। তার ঝলমলে চোখে অহংকার, সাহসিকতা আর ব্যক্তিত্ব খেলা করছে। তার কোমরে তরবারি ঝোলানো। পিঠে তীরে ভরা তুনীর আর ধ্নু। তেজী এক ঘোড়ার পিঠে বসেছিল আসেম। বসার সে ভঙ্গি দেখলে মনে হয়, ডানে বায়ে সশস্ত্র দুশমন থাকলেও তার দৃঢ়তায় কোন পার্থক্য আসতনা। অথবা আরবী পোশাক ছাড়া রোমান রোমান সৈনিকের ইউনিফর্মে থাকলে এবং পিছনে গোলামের পরিবর্তে ...

হযরত আইউব আলাইহিস সালাম-পার্ট ১

Image
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর জ্যেষ্ঠ ভাই ইস বা আইস-এর বংশধর ছিলেন। ইসে্র পিতা ছিলেন হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম এবং তিনি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর পুত্র ছিলেন। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর পুত্র ফ্রাহিমের এক কন্যার নাম ছিল রাহীমা । রহিমার সাথে হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর বিবাহ হয়েছিল। হযরত আইউব আলাইহিস সালাম একদিকে যেমন আল্লাহর নবি ও রাসূল ছিলেন, অন্যদিকে তিনি একটি বিশাল রাজ্যের বাদশাহও ছিলেন। তাঁর ধন-সম্পদ ও বিষয় বৈভব ছিল ধারণাতীত।নবী সুলভ আখলাকের জন্যই তিনি সবসময় আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় তিনি মহান আল্লাহ পাকের ইবাদাত করে সময় কাটাতেন। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম নবীর ধর্মীয় আদেশ ও বিধি-বিধান তিনি প্রচার করতেন। হযরত আইউব আলাইহিস সালাম ছবরকারী নবীগনের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। হযরত আইউব আলাইহিস সালাম এর নামে বিভিন্ন তাফসীর বিশারদগন যে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে গেছেন সেগুলোয় ভিত্তি খুবই দুর্বল। আমি কিছু সে ধরণের ঘটনা এই লেখায় নিয়ে আসব। কিন্তু এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। পাপীষ্ঠ ইবলিস তাঁর একনিষ্ঠ ইবাদাতে এবং ধর...

হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (শেষ পর্ব)

Image
আহলে মাদইয়ানের উপর আপতিত গযবের বিবরণঃ হযরত শোয়াইব (আঃ) এর শত উপদেশ উপেক্ষা করে যখন কওমের লোকেরা তাদের অন্যায় কাজসমূহ চালিয়েই যেতে থাকল এবং নবী ও তাঁর অনুসারিদেরকে জনপদ থেকে বের করে দেওয়ার ও হত্যা করে ফেলার হুমকি দিল তখন হযরত শোয়াইব (আঃ) বিষয়টি আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিলেন এবং কওমের লোকেদের বললেন , "তোমরা এখন আযাবের অপেক্ষায় থাক। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।"(সূরা-হূদ-৯৩)। এদিকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় চিরন্তন বিধান অনুযায়ী শোয়াইব (আঃ) ও তাঁর ইমানদার সাথীগনকে উক্ত জনপদ হতে অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নিলেন। অতঃপর জিব্‌রাইল (আঃ) এর এক গগনবিদারি নিনাদে অবাধ্য কওম এর সকলে ধ্বংস হয়ে গেল।  এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, "অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি শোয়াইব ও তাঁর ইমানদার সাথীগনকে নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করলাম। আর পাপিষ্ঠদের উপর বিকট গর্জন আপতিত হ'ল। ফলে তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে মরে পড়ে রইল । (তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হ'ল) যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি । সাবধান! ছামূদ জাতির উপর অভিসম্পাদের ন্যায় মাদইয়ানবাসীর উপরেও অভিসম্পাদ"(সূরা-হূদ, ৯৪-৯৫)। যদিও তারা ...

হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (পর্ব-২)

Image
হযরত শোয়াইব (আঃ) এর নিঃস্বার্থ ও আন্তরিকতাপূর্ণ দাওয়াত তাঁর কওমের লোকদের হ্রদয়ে রেখাপাত করল না। তারা বরং আরো বিক্ষিপ্ত ও উচ্ছ্রংখল হয়ে তাঁর সুললিত বয়ান ও অপূর্ব চিত্তহারী বাগ্মীতার জবাবে পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত কওমের নেতাদের মত নবিকে প্রত্যাখ্যান করল এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও তাচ্ছিল্য করে বলল, 'তোমার সালাত কি তোমাকে একথা শিখায় যে, আমরা আমাদের ঐসব উপাস্যের পূজা ছেড়ে দেই, আমাদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে যাদের পূজা করে আসছে? আর আমাদের ধন-সম্পদে ইচ্ছামত আমরা যা কিছু করে থাকি, তা পরিত্যাগ করি? তুমি তো একজন সহনশীল ও সৎ ব্যাক্তি' (সূরা-হুদ, আয়াত-৮৭)। অর্থ্যাৎ তুমি একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি হয়ে একথা কিভাবে বলতে পার যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা দেব-দেবীর পূজা পরিত্যাগ করি এবং আমাদের আয়-উপার্জনে ও রুজি-রোযগারে ইচ্ছামত চলা ছেড়ে দিই। আয়-ব্যয়ে কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম তা তোমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে কাজ করতে হবে এটা কি কখনো সম্ভব হতে পারে? তাদের ধারনা মতে তাদের সকল কাজ চোখ বুজে সমর্থন করা ও তাতে বরকতের জন্য দোয়া করাই হ'ল সৎ ও ভাল মানুষদের কাজ। শোয়াইব (আঃ) অধিকাংশ সময় ছালাত ও ইবাদত...

হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জীবনী (পর্ব-১)

Image
আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ৬টি জাতির মধ্যে ৫ম জাতি হ'ল 'আহলে মাদইয়ান' । 'মাদইয়ান' হল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরীয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধী পূর্ব জর্ডানের সামুদ্রিক বন্দর 'মোআন' এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। কুফরি করা ছাড়াও এই জনপদের লোকজন ব্যবসায়ের ওযন ও মাপে কম দিত, রাহাজানি ও লুটপাট করত। অন্যায় পথে জনগনের মালসম্পদ ভক্ষণ করত। ইয়াকুত হামাভী (রহঃ) বলেন, ইবরাহীম-পুত্র মাদইয়ানের নামে জনপদটি পরিচিত হয়েছে । হযরত শোয়াইব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিল। ইনি হযরত মুসা (আঃ) এর শ্বশুর ছিলেন। কওমে লূত এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে কওমে মাদইয়ানের প্রতি তিনি প্রেরিত হন । চমৎকার বাগ্মিতার কারণে তিনি 'খাতিবুল আম্বিয়া' নবিগনের মধ্যে সেরা বাগ্মী) নামে খ্যাত ছিলেন। আহলে মাদইয়ান কে পবিত্র কোরাআনে কোথাও কোথাও 'আছহাবুল আইকাহ্‌' বলা হয়েছে। যার অর্থ 'জঙ্গলের বাসিন্দাগণ'। এটা বলার কারণ এই যে, এই অবাধ্য জনগোষ্ঠী প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে আল্লাহ তাদেরকে সেখানেই ধ্বংস করে দেন। এটাও বলা হয় যে, উক্ত জঙ্গলে আ...